টোপ
"টোপ"
✒ সুব্রত নন্দী মজুমদার
অবাক হবার যথেষ্ট কারণ আছে। শ্যামাকান্ত অত্যন্ত লাজুক ছেলে, বিশেষ করে কোন মেয়েকে সামনে দেখলে সে অন্য কোণে লুকিয়ে পড়ে। শিল্পার সঙ্গ পাবার জন্য আমরা সবাই উন্মুখ হয়ে থাকতাম, কিন্তু সে পাত্তা দিত না কাউকেই। তাই অবাক হওয়ারই কথা। শুধু আমাদের ক্লাসের নয়,কলেজের সুন্দরীশ্রেষ্ঠা শিল্পার সঙ্গে শ্যামাকান্ত, ভাবতেই পারিনা। বন্ধুদের সবাইকে কথাটা বলতে হবে।
হস্টেলে ফিরে ক্যান্টিনে বসে চায়ের কাপে তুফান তুলে আমি বন্ধুদের ব্যাপারটা বললাম। আমরা বাইরের দিকে তাকিয়ে শ্যামাকান্তর হস্টেলে ফেরার অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষন পরে দেখি শ্যামাকান্ত মুখ নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে ক্যান্টিন পেরিয়ে তার রুমের দিকে চলে যাচ্ছে।
আমি চিৎকার করে ডাকি, এই শ্যামা, এদিকে আয়।
সে লাজুক মুখে আমাদের দিকে তাকিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। আমি বলি, কি হল? আয়।
শ্যামাকান্ত ধীরে ধীরে ক্যান্টিনে ঢোকে। প্রবীর বলে, বস, চা আনাচ্ছি।
সে তেমনি মুখ নিচু করে বলে, না, এখন আর চা খাব না।
আমি বলি, ঠিক আছে , বস না, আমি খাওয়াব।
শ্যামা চুপ করে আমার পাশের চেয়ারটাতে বসে। আমি বললাম, কোথায় গিয়েছিলি?
শ্যামা মুখ কাচুমাচু করে বলে, এই একটু ঘুরতে।
লেকের হাওয়া খাচ্ছিলি নাকি, প্রবীর বলে।
ঐ, ঐ দিকটাতেই ঘুরছিলাম, শ্যামা বলে।
বুঝলাম ঘড়েল মাল, সহজে ধরা দেবে না। আমি বলি, তুই মাছ ধরতে পারিস?
না না, শ্যামা বলে, জীবনে কোনদিন ওসব করি নি। একথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?
আমি চোখ কুঁচকে বললাম, আমি যখন ওধার দিয়ে আসছিলাম, তখন মনে হল তোকে দেখলাম লেকের জলে ছিপ ফেলে মাছ ধরছিস।
শ্যামাকান্ত বোকার মত হাসে। আমি বললাম, তোর পাশে কাকে যেন বসে থাকতে দেখলাম, দূর থেকে ভাল করে চিনতে পারি নি, মনে হল আমাদের ক্লাশের শিল্পার মত দেখতে।
শ্যামাকান্ত মিটিমিটি হাসে। আমি বলি, কে ছিল ঐ মেয়েটা? শিল্পাই তো? তাই না?
শ্যামাকান্ত আমার কথার জবাব না দিয়ে তখনো হাসে। আমি বলি, কি রে? কে ছিল ওটা? বলছিস না কেন?
প্রবীর আমাকে বলে, তুই ঠিক দেখেছিস?
আমি একটু ভেবে বলি, হ্যাঁ, আমি শিওর, ওটা শিল্পাই ছিল। আমার মনে আছে কাল ঐ নীল রঙের শাড়িটা পরে সে কলেজে এসেছিল। কি রে শ্যামা, ঠিক বলি নি? শ্যামাকান্ত এবার মুখ তুলে আস্তে আস্তে বলে, সবে ছিপ ফেলেছি, এখনো টোপ গেলে নি।
আমরা একসঙ্গে হো হো করে হেসে উঠলাম।

কোন মন্তব্য নেই