"আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে (তৃতীয় অংশ)
""আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে (তৃতীয় অংশ)"
✒ সমীরণ সরকার
(তিন)
ও মশাই, দেশটা দিনে দিনে কি হলো বলুন তো ,?ও মশাই শুনছেন --এইযে---- ও মশাই শুনছেন ?চমক ভাঙ্গে সোমনাথের ।
খেয়াল করে দেখেন তার বিপরীত দিকের সিটে বসা বছর-পঞ্চাশ এর প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি যেন তার উদ্দেশ্যে কিছু বলছেন ।ভদ্রলোকের পরনে ধুতি পাঞ্জাবি ,চোখে চশমা, হাতে বাংলা খবরের কাগজ ।
সোমনাথ একটু থতমত খেয়ে বলেন, ,,মাফ করবেন ,কিছু বললেন আমাকে ?
--হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি ।আপনি ছাড়া তো কামরায় ভদ্রলোক কাউকে দেখছি না। শব্দ মজুর চাষা কুলিদের ভিড় ।এদের জ্বালায় স্বস্তিতে ট্রেন বাসে উঠার জো পর্যন্ত নেই ।আর হবে নাই বা কেন, যে দল ক্ষমতায় আসে মশাই, সেই দলই এদের মাথায় তুলে নাচে। স্কুল কলেজে ভর্তি হওয়া বলুন, চাকরির ক্ষেত্রে বলুন সর্বত্র এদের কোটা আছে। অথচ বামুন কায়েতের ঘরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে চাকরির অভাবে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব দেখেশুনে আর সহ্য করা যায় না মশাই ।ভদ্রলোকের কথা শুনে সোমনাথ দ্রুত কামরার এ মাথা থেকে ও মাথা অব্দি চোখ বুলিয়ে নিলেন। এটা লোকাল ট্রেন। ঘনঘন স্টপেজ আছে। আর সেই স্টপেজে স্থানীয় যাত্রী ওঠানামা করছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই খুব সাধারণ লোক। টুকটাক নানারকম কাজ করে। হয়তো কোন রকমে দিন গুজরান করেন। তাই তাদের পোষাক আশাকেও খুব একটা জৌলুস নেই ।আর তাই এদের ছোটলোক বলে অভিহিত করছেন প্রৌঢ়। এই ধরনের নাক-উঁচু লোকদের একদম পছন্দ করেন না সোমনাথ। তবু নেহাত ভদ্রতার খাতিরে বললেন ,কিছু বলছিলেন আমাকে ?
--আপনি কোথায় যাবেন??
---গিডনি।
--- আপনি --আপনি কি গিডনিতে থাকেন?
--- না, বাইরে।
---তবে বুঝি আত্মীয়-স্বজন আছে ওখানে?
-- তা বলতে পারেন। গিধ্নির কাছেই একটা গ্রামে আমার পৈতৃক ভিটে। ওখানেই যাচ্ছি আমার ভাইঝির বিয়ে উপলক্ষে।
--- ও ।তা বেশ বেশ । আচ্ছা আজকের খবরের কাগজটা পড়েছেন?
--- হ্যাঁ।
---- দেখেছেন বারাসতের কাছে একটা বারো বছরের নাবালিকাকে সাত-আটজন জন বয়স্ক পুরুষ মিলে -- ছিঃ! ছিছিছি-- ভাবা যায়?]
খবরের কাগজ খুললেই রোজই একাধিক ধর্ষণের ঘটনা।
চুপ করে থাকেন সোমনাথ। কোন উত্তর দেন না। কি বলবেন তিনি? ব্যাঙ্গালোরে বসে শুনতে পান যে ইদানিং পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ আর খুনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আসলে কোন প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয় দেশের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ জনগণকে কন্ট্রোলে রাখা, যদি না তারা নিজেদের মানসিকতা পরিবর্তন করে, যদি না নিজেরাই আইন-শৃঙ্খলা সামাজিক দায়িত্ববোধ,সৎ সুস্থ সুন্দর চিন্তাধারার বাতাবরণ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু পলিটিকাল লিডার্স কি এর দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন? দেশের জনগণ যাদের উপর দেশ পরিচালনার নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন তারা কি জনগণের চোখে নিজেদের ভাবমূর্তি নিষ্কলুষ বিতর্কাতীত রাখতে পেরেছেন?না। আর সেটাই কি জনগণের ফ্রাস্ট্রেশন এর একটা বড় কারণ নয়? তবে তা কখনোই ধর্ষণ বা খুনের মত জঘন্য অপরাধী তৈরি করে না। ওই ধরনের অপরাধী যারা, বিকৃত মানসিকতার শিকার যারা, হয়তো তাদের পরিবার পরিবেশের মধ্যে অথবা সমগ্র জীবনের মধ্যে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে ধ্বংসাত্মক মানসিকতার বীজ ।কিন্তু এসব নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা সোমনাথের এখন মোটেই নেই ।তাই তিনি চুপ করে থাকলেন।
(ক্রমস...)


কোন মন্তব্য নেই